পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে

 রাজশাহীর চারঘাটের রাওথা গ্রামে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণের কাজ চলছে। গত বুধবার

অর্থের অভাবে রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, ঠিকাদারদের পাওনা হয়েছে ১২০ কোটি টাকার বেশি। এ পর্যন্ত বিল দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৪ কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ‘রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাঁ তীরের স্থাপনাগুলো নদীভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্প’-এর আওতায় ৭২২ কোটি টাকার এ কাজ চলছে। এই প্রকল্পে মোট ১৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে ১০টি প্যাকেজে ১০ জন ঠিকাদার চারঘাটের রাওথা থেকে বাঘা উপজেলার গোকুলপুর পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার তীর রক্ষার কাজ পেয়েছেন। একজন ঠিকাদার ৮০০ মিটার পুনর্বাসনের (পুরোনো বাঁধ সংস্কার) কাজ পেয়েছেন। আর অন্য আটজন পেয়েছেন ১২ কিলোমিটার ১০০ মিটার নদী খননের কাজ। নদী খননের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে খননকাজ শুরু হয়নি।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

পাউবো সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ৩০ জুন। তীর রক্ষার কাজ পাওয়া ১০ ঠিকাদার ইতিমধ্যে ১২০ কোটি টাকার কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁরা বিল পেয়েছেন মাত্র ৩৪ কোটি টাকা। অর্থ ছাড় না হওয়ায় পাউবো ঠিকাদারদের টাকা দিতে পারছে না। আর অর্থসংকটে ঠিকাদারেরাও কাজ এগিয়ে নিতে পারছেন না। ১০ জনের মধ্যে ৪ জন গত ঈদের আগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে থেকে তাঁরা আবার কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু কাজের গতি নেই।

গত রোববার চারঘাটের রাওথা ও বাঘার গোকুলপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরে ব্লক বসানোর কাজ চলছে। গোকুলপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আবু হুরাইরাহ (২৮) বলেন, নদীর ভাঙনে তাঁর নিজের প্রায় ১০০ আমগাছ বিলীন হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে গ্রামের মানুষের ৪০০ থেকে ৫০০ আমগাছ পদ্মা নদীতে হারিয়ে গেছে। নদীর তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় তাঁরা আশাবাদী হয়েছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, এই কাজের কোনো গতি নেই। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ চলছে। যে অবস্থা দেখছেন, তাঁর নিজের বাড়িটাও এখন ভাঙনের মুখে পড়েছে।

চারঘাটের রাওথা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ সময়মতো না হলে তাঁরা ভাঙনের ঝুঁকিতেই থাকবেন। সামনে বর্ষাকাল আসছে। তখন ঝুঁকি আরও বাড়বে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভর করে তাঁরা এই পর্যন্ত কাজ করেছেন। কিন্তু এই কাজে ব্যাংক আর ঋণ দিতে চাচ্ছে না। এটা নিয়েই তাঁরা বিপাকে পড়ে গেছেন। তা ছাড়া তীর সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান পাথরের সংকট দেখা দিয়েছে। দামও বেড়ে গেছে। কাজের শুরুতে যে পাথরের দাম ছিল ১৫০ টাকা সিএফটি ছিল, এখন সেই পাথরের দাম ২০৫ টাকা সিএফটি।

রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ঠিকাদারদের প্রায় ১২০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত তাঁদের মাত্র ৩৪ কোটি টাকার বিল দিতে পেরেছেন। চতুর্থ কিস্তির টাকা এলে হয়তো আরও ১৭ কোটি টাকা দিতে পারবেন। কিন্তু ঠিকাদারদের পাওনা তার চেয়ে অনেক বেশি। চলতি অর্থবছরে কোনো বরাদ্দ না থাকার কারণে তাঁরা প্রকল্পের কাজটি দ্রুত এগিয়ে নিতে পারছেন না।

রাজশাহী পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সারওয়ার-ই-জাহান বলেন, অর্থ ছাড়ের জন্য একাধিকবার তাঁদের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ এক মাস আগে এই চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।

Post a Comment

[blogger]

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget