টিকাদান কর্মসূচির শুরু থেকেই রাজশাহী মহানগরীতে চারটি কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। রেজিস্ট্রেশনের নির্দিষ্ট তারিখে টিকাগ্রহণকারীরা এসব কেন্দ্রে গিয়ে টিকার ভ্যাকসিন নিতো। কিন্তু মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে শনিবার (০৭ আগস্ট) চালু হয়েছে গণটিকা কার্যক্রম। ফলে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে যারা পূর্বের এই চারটি কেন্দ্র টিকা নেয়ার জন্য নির্ধারণ করেছিলেন তাদের অধিকাংশ রেজিস্ট্রেশনে উল্লেখ করা স্ব-স্ব এই চারটি কেন্দ্রে শনিবার গণটিকা নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন। এমনকি রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে (পূর্ব থেকে চালু ছিল) মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় ওই কেন্দ্রে শুরু হয় হট্টগোল, হুহোহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কি।
সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- টিকা কার্যক্রম শুরু সময় নির্ধারিত ছিল সকাল ৯টা। তবে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শনিবার সকাল সাতটা থেকেই টিকা নিতে আসা মানুষের উপস্থিতি ছিল নজিরবিহীন। বেলা বাড়ার ৯টার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ টিকা নিতে টিটিসি কেন্দ্রে আসে। শুরু হতে থাকে প্রচুর ভিড়। এরই মধ্যে সকাল ৯টায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। কিন্তু সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটেই নির্ধারিত টিকা শেষ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে। এতেই ঘটে যায় বিপত্তি। কয়েক ঘণ্টা থেকে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে টিকাদান কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ শুরু করেন। এক পর্যায়ে হুড়োহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কিতে টিটিসি ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের বিশৃঙ্খলার কারণে স্বাস্থকর্মীরা বুথ ফেলে সরে যান। পড়ে থাকে টিকার সরঞ্জাম। শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ মানুষ টিকা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। তাঁরা সবাই প্রথম ডোজের টিকা নিতে গিয়েছিলেন।
শুধু টিচার্স ট্রেনিং কলেজেই নয়; মহানগরীতে আগে থেকেই বাকি তিনটি কেন্দ্র যথাক্রমে- বিভাগীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল কেন্দ্র, আইডি হাসপাতাল কেন্দ্র ও সিএমএইচ রাজশাহী কেন্দ্রেও অতিরিক্ত ভিড় পরিলক্ষিত হয়। এর একমাত্র কারণ রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে যারা এসব কেন্দ্র টিক দিয়েছিলেন তাদের সবাই গণটিকা নিতে এসব কেন্দ্রগুলোতে যায়। যার কারণেই অতিরিক্ত এই ভিড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে টিকাদান ও গ্রহণকারীদের।
তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন বলছে- ভুল বুঝে মানুষ টিচার্স ট্রেনিং কলেজসহ পূর্বের চারটি টিকাদান কেন্দ্রে গণটিকা নিতে গিয়েছেন। যার কারণেই এমন বিপত্তি ঘটেছিল। নিয়ম হচ্ছে- এই চারটি কেন্দ্রে টিকা কার্ডের নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী টিকা নেয়ার কথা। কিন্তু গণটিকার কথা শুনে কোনো তারিখ দেখার বালাই ছিল না; যারাই এই চারটি কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন তাদের অধিকাংশই গণটিকা নেয়ার জন্য এই কেন্দ্রগুলোতে যান। নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে টিকা দেওয়ার কথা ছিল। এটা তাঁরা বুঝতে ভুল করেছেন।
তবে কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আসা লোকজন অভিযোগ করে বলছেন, গণটিকা কার্যক্রম ওই চারটি কেন্দ্রে দেয়া হবে না; এই বিষয়টি যদি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হতো তাহলে টিকা নিতে আসা জনসাধারণকে এমন ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
রাজশাহী আইডি হাসপাতাল রেজিস্ট্রেশনে টিকা নেয়ার কেন্দ্র উল্লেখ করেছিলেন নগরীর টিকাপাড়া এলাকার মো. আব্দুল আলিম। তিনি বলেন, ‘আমার টিকা দেয়ার তারিখ ছিল আজ। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকাদান কেন্দ্রের সামনে গেলে কর্তৃপক্ষ আমাকে নিজ ওয়ার্ডে টিকা দিতে বলেন। আমি বাধ্য হয়ে ফিরে আসি।’
আশিকুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনে আমি টিকাদান কেন্দ্র উল্লেখ করেছিলাম টিটিসি। কিন্তু ভেবেছিলাম গণটিকাটা সেখানেই নিতে হবে। তাই সকালে টিটিসিতে টিকা নিতে যাই। গিয়ে দেখি হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে সেখানকার টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্তরা মাইকে ঘোষণা দেন নির্ধারিত টিকা শেষ হয়ে গেছে। তাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে ফিরে আসি নিজ ওয়ার্ডে। সেখানেও এসে দেখি সিরিঞ্জ শেষ হয়ে গেছে। তাই আর টিকা নেয়া হয়নি।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্র (টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), পুলিশ হাসপাতাল কেন্দ্র, আইডি হাসপাতাল কেন্দ্র, সিএমএইচ রাজশাহী কেন্দ্র থেকে। কিন্তু টিকা দেওয়া হবে প্রতিটি ওয়ার্ডে। কোনো ওয়ার্ডে দুটি, কোনো ওয়ার্ডে তিনটি পর্যন্ত কেন্দ্র করা হয়েছে। মানুষ না বুঝে নিবন্ধন করা কেন্দ্রে চলে গেছেন। তিনি আরও বলেন, দুপুর ১২টার দিকে আমি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। সেখানে পরিস্থিতি দেখে অতিরিক্ত আরও ১ হাজার ২০০ টিকা দিয়ে এসেছি। তারপর আবারও টিকা কার্যক্রম সেখানে চালু হয়।
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘টিটিসি কেন্দ্রে ভুল করে টিকা নিতে আসা লোকজন হট্টগোল শুরু করেছিল। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
উল্লেখ্য, শনিবার (০৭ আগস্ট) থেকে রাজশাহী নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ৮৪টি কেন্দ্রে একযোগে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচি চলবে ১২ আগস্ট পর্যন্ত। ৬ দিনের এই ক্যাম্পেইনে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন ২৫ হাজার জনকে মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা প্রদান করা হবে। ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের এই টিকা প্রদান করা হচ্ছে
Post a Comment