পারিবারিক নাপিত, মালি ও কাঠমিস্ত্রিকেও চাকরি দিয়েছেন রাবি উপাচার্য!


মেয়াদের শেষ দিনে ক্যাম্পাস ত্যাগের আগে অ্যাডহকে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগের ওপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করেই গণনিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের স্বজন, ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী ও সাংবাদিক। এমনকি পারিবারিক নাপিত, মালি ও কাঠমিস্ত্রিকেও চাকরি দিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়োগের তালিকায় ১৪ নম্বরে থাকা শামসুল আলম দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য আব্দুস সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের চুল কাটতেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুয়ার্ড শাখায় নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগের তালিকায় ১৩ নম্বরে থাকা আব্দুস সামাদ রাজন পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তার বাড়ি কাজলার ধরমপুর এলাকায়।
তিনি উপাচার্যের ব্যক্তিগত ফার্নিচার বানিয়ে দিতেন। তাকে প্রকৌশল দফতর শাখায় কাঠমিস্ত্রি পদে চাকরি দিয়েছেন উপাচার্য।
উপাচার্যের কর্মচারীদের স্বজনরাও পেয়েছেন চাকরি
উপাচার্যের বাসভবনে মালির কাজ করতেন সাইফুল ইসলাম। তার স্ত্রী মিনু খাতুন ওই বাসভবনে গৃহপরিচারিকা ছিলেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে আয়া পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের তালিকায় তার ক্রমিক নম্বর ১১। এছাড়া কাজলা এলাকায় ফজলুল হক নামে এক ব্যক্তি নিয়মিত উপাচার্যকে মাংস সরবরাহ করতেন। তার মেয়েরও চাকরি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তার মেয়ের নাম ও কোন পদে চাকরি পেয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিয়োগ-সংক্রান্ত অফিস আদেশ ও তালিকা বাংলানিউজের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, অ্যাডহকের মাধ্যমে ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী এবং ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। উপাচার্যের নির্বাহী আদেশে সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলী নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
নিয়োগের আদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর ১২ (৫) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নলিখিত প্রার্থীদের তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদ ও স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) অনধিক ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। এ নিয়োগ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হোক। এছাড়া নিয়োগপত্রে বলা আছে, প্রার্থীদের নিয়োগ যোগদানের দিন থেকে কার্যকর হবে।
যেসব পদের বিপরীতে নিয়োগ হয়েছে:
নিয়োগের তালিকায় দেখা যায়, অ্যাডহকের মাধ্যমে ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন তৃতীয় শেণির এবং ২৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
শিক্ষক পদে যারা নিয়োগ পেলেন
শিক্ষক পদে ৯ জনের মধ্যে একজনকে সহযোগী অধ্যাপক ও ৮ জন প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রভাষক পদে ৮ জন হলেন- ফিশারিজ বিভাগে তাসকিন পারভেজ, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ইন্দনিল মিশ্র, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সে ড. শাহরিয়ার মাহবুব, সংগীত বিভাগে ঋত্বিক মাহমুদ, ইতিহাস বিভাগে কামরুজ্জামান, আরবি বিভাগে ড. এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমান, সমাজকর্ম বিভাগে আফজাল হোসেন এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগে আসাদুজ্জামান।
এছাড়া সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক (আইটি) হিসেবে ড. সাবিহা ইয়াসমিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তা পদে যারা নিয়োগ পেলেন
সেকশন অফিসার পদে ১২ জন, সহকারী রেজিস্ট্রার পদে দুজন, সহকারী প্রকৌশলী পদে দুজন, আবাসিক শিক্ষিকা পদে পাঁচ জন ও দুইজন শরীরচর্চার শিক্ষক।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে সিনিয়র সহকারী পদে একজন, উচ্চমান সহকারী পদে ৩০ জন, নিম্নমান সহকারী পদে ৪৩ জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে দুজন, তত্ত্বাবধায়িকা পদে তিন জন, গার্ড সুপারভাইজার পদে একজন, জুনিয়র গ্রন্থাগারিক পদে একজন, সহকারী স্টোরকিপার পদে দুজন, হিসাব সহকারী পদে একজন ও পেশ ইমাম পদে একজন।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে ১০ জন অফিস সহায়ক, আট জন নিরাপত্তা প্রহরী, দুজন আয়া, বাস কন্ডাক্টর দুজন, কাঠমিস্ত্রি এবং গবেষণাগার পরিচারক একজন করে রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের বক্তব্য
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজ' ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ।
দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের মুখপাত্র অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার পাশাপাশি এই নিয়োগে একাধিক নিয়মের লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রেজিস্ট্রার দায়িত্বে থাকলেও তাকে বাদ দিয়ে একজন উপ-রেজিস্ট্রারকে দিয়ে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ ছাড়াই দেওয়া হয়েছে শিক্ষক নিয়োগ। নিয়োগের আগে ফিন্যান্স কমিটির সভায় এসব পদের বিপরীতে বেতন-ভাতা পাস হয়নি। এমনকি সিন্ডিকেট সভায়ও এই নিয়োগের বিষয়ে রিপোর্ট করে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয়নি। ইউজিসি যদি এডহকের বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানায় তখন ক্যাম্পাসে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে

Post a Comment

[blogger]

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget